নিউজ ডেস্ক:
সাবেক আইন ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞার দ্বিতীয় জানাজা নিজ নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাদ আছর সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের এমপি এ.বি.এম. ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাবেক এমপি এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রফিক উদ্দিন ঠাকুর, সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাজমুল হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সহশ্রাধিক মানুষ জানাযায় অংশগ্রহন করেন। জানাযা শেষে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা (৮৪) শনিবার ভোর তিনটায় ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এক সপ্তাহ আগে তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলে। তিনি ছয় বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ১ ছেলে ও ২ মেয়েসহ অসংখ্যগুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে গত এক সপ্তাহ আগে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার ভোর ৩টা ২ মিনিটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। সকাল ১১ টায় জাতীয় সংসদ ভবনে তার প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার নির্বাচনী এলাকায় বাদ আসর অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ মাগরিব অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ভূঞা ডিগ্রী কলেজ মাঠে তৃতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তার পর নিজ গ্রামে বাদ এশা পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে জানাযা শেষে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
আব্দুল সাত্তার ভূঞা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ ভূঞা ও রহিমা খাতুনের সন্তান। ১৯৩৯ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। প্রতিষ্ঠাকালীর সময় থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। কুমিল্লা জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ ২৮ বছর। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা পদে থাকা অবস্থায় চলতি বছরের ২ জানুয়ারি বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা-১ (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। এরপর তিনি পঞ্চম (১৯৯১), ষষ্ঠ (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি), সপ্তম (১৯৯৬ সালের ১২ জুন) এবং ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১ ফেব্রæয়ারি নিজের ছেড়ে দেয়া আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পূণরায় তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
কর্মজীবনে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া ছিলেন একজন আইনজীবী। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বার এ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন এবং পরিচ্ছন্ন এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিলনা। কোন নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হননি।
২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট গঠনের প্রেক্ষিতে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। কিন্তু ৪ দলীয় জোট সরকার তাকে টেকনোক্রেট কোঠায় প্রতিমন্ত্রী করেন। সেই মেয়াদের (২০০১-২০০৬) বিভিন্ন সময় তিনি চারটি মন্ত্রণালয়ে (আইন, ভ‚মি, মৎস্য এবং বিদ্যুৎ) দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
কিন্তু, চলতি সংসদ থেকে বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করার পর উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দেয়নি, বিএনপিও মাঠে নেই। ফলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও স্থানীয় নেতারা তার হয়ে কাজ করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে পরাজিত করে তাকে পূণরায় এমপি নির্বাচিত করেন।