স্টাফ রিপোর্টার:
আজ ৬ সেপ্টেম্বর সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী। শৈশবে নিজ এলাকায় আলম নামে পরিচিত ক্ষণজন্মা এই সঙ্গীত শিল্পী গ্রাম বাংলার জারি, সারি গানের টানে মুগ্ধ হয়ে কিশোর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যোগ দেন যাত্রা দলে।
এক সময়ের অজপাড়া গ্রামের সেই আলমই সেতার, সানাই এবং রাগ সঙ্গীতের বিখ্যাত মাইহার ঘরণার গুরু হিসেবে সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ নামে সমগ্র বিশ্বে পরিচিতি পান।
তার পৈত্রিক ভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলাউদ্দিন খাঁর হাতে গড়া মসজিদ সংস্কার ও তার বাবা মায়ের কবর সংস্কার করা হলেও প্রয়োজনীয় রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে বিশ্ব বরেণ্য এই সুর সাধকের পৈত্রিক সম্পদ এখন অবৈধ দখলদারদের কবলে। স্থানীয়দের দাবী এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ তার স্মৃতি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হউক।
জানা যায়, ১৮৬২ সালে ৮ অক্টোবর নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের এক সঙ্গীতপ্রেমী পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তিনি। পিতা সবদর হোসেন খাঁ ও মাতা সুন্দরী বেগমের তৃতীয় সন্তান আলাউদ্দিন খাঁ। ফকির আফতাব খাঁ’র কাছে তার সঙ্গীতের হাতেখড়ি। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের রাগ সংঙ্গীতের নতুন নতুন রাগের শ্রষ্ঠা। ১৯৩৫ সালে ইংল্যান্ডের রাণী কর্তৃক সুর সম্রাট খেতাব প্রাপ্ত এবং বৃটিশ সরকার কর্তৃক খাঁ উপাধিতে ভূষিত হন। এসব দুর্লভ খেতাব ও সম্মানের অধিকারী আলাউদ্দিনের খ্যাতি বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও নিজ ভূমিতে তিনি অনেকটাই অপরিচিত।
নবীনগরের শিবপুরে এ সংঙ্গীত সাধকের জন্ম ভূমি দেখার জন্য এখনো দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন আসে। এখানে রয়েছে তার নিজ হাতে গড়া একটি মসজিদ, এলাকাবাসীর উদ্যোগে গড়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাউদ্দিন খাঁর হাতেগড়া মসজিদ ও তার মা-বাবা কবর সংস্কার করা হয়। প্রতিবারই উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি পালন করা হলেও এবরাই প্রথম আলাউদ্দিনের নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করা হয়েছে।
স্থানীয়া জানান, প্রয়োজনীয় রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে তার পৈত্রিক ভিটাসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ব্যাহত হয়ে এসব সম্পদ উদ্ধার করে আলাউদ্দিন খাঁ’র স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এছাড়া আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে জেলা পর্যায়ে একটি কালচারাল কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনাটি দীর্ঘ দিনেও বাস্তবায়ন হয়নি। তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য দ্রæত এখানে একটি কালচারাল কমপ্লেক্স নির্মাণসহ সরকারী ভাবে তার জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করার দাবী স্থানীয়দের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম বলেন, রাগ সঙ্গীতের যিনি বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছের তার স্মৃতি সংরক্ষণে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল সিদ্দিক জানান, ব্যাহাত সম্পত্তি উদ্ধারসহ স্মৃতি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার হচ্ছে।
উলেখ্য, ১৯৯৭২ সালে ৬ই সেপ্টেম্বর ১১০ বছর বয়সে ভারতের মাইহারে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।